‘নো নো, এসব নিয়ে কথা বলব না’

নিজেদের মধ্যকার ‘ঝামেলা’ মিটিয়ে আবারও ফিরেছেন মাইলস ব্যান্ডের ভোকাল শাফিন আহমেদ। মাসখানেক হলো দলের সঙ্গে নিয়মিত মহড়াও করছেন। ৯ আগস্ট মাইলসের ফেসবুক পেজে শাফিনের দলে যুক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়। ভক্তদের প্রত্যাশা, তাঁদের প্রিয় গানের দলটি যেন সুখে-দুঃখে থাকে একসঙ্গেই। অন্যদিকে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েই ডুব দিয়েছিলেন দলটির সদস্যরা। দুদিন ধরে যখন কারও খোঁজই মিলছিল না, তখন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন শাফিন। শনিবার দুপুরে নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন। তবে আলাপের শুরুতেই বললেন, শর্ত প্রযোজ্য। অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো কিছু যেন নতুন করে সামনে টানা না হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের।

অভিনন্দন। ভক্তরা ফিরে আসার খবরে আনন্দিত।
ধন্যবাদ। আমরা সবাই তা উপলব্ধি করতে পারছি। দুর্ঘটনার কথা নতুন করে ভক্তদের মনে করিয়ে দিতে চাই না। আমি ইতিবাচক ব্যাপারগুলো নিয়ে থাকতে চাই। নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলতে চাই।

যে সমস্যাগুলো হয়েছিল, সেসব নিয়ে কিছুই বলবেন না?
একদমই না।

আচ্ছা এটা তো অন্তত বলবেন, কোন প্রেক্ষাপটে আবার এক হলেন?
বিভেদ মিটিয়ে যেহেতু আমরা এক হয়েছি, সেসব আর ঘাঁটানোর তো দরকার নাই। কোনো অর্থই হয় না। এটা শুধু ভক্তদের মনে করিয়ে দেবে, তা না। বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। পেছন দিকের ঘটনা কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল—বহু লেখালেখি হয়েছিল, এটা মনে করিয়ে দিতে চাই না।

২০১০ সালে আরেকবার দল ছেড়েছিলেন। এবার ফিরলেন, মাইলসে কত দিন থাকবেন?
১৯৭৯ সালে মাইলসের শুরু থেকেই আমি একজন সদস্য। মাইলসকে সব সময় আমারই ব্যান্ড মনে করি। দীর্ঘ চলার পথে, কর্মক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হতেই পারে। তবে সেগুলো সবই সাময়িক। মূলত, মাইলসকে নিয়ে চলাটাই আমার জন্য স্বাভাবিক পথচলা। এর ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। ভক্তরাও বোধ করি সেটাই প্রত্যাশা করেন।

ভক্তদের নতুন আশঙ্কার কিছু নাই, তাই তো?
আমি নেতিবাচক কোনো পয়েন্টেই যাব না। আমি বলতে চাই, ভবিষ্যতে নিয়মিত থাকাটাই স্বাভাবিক।

এই যে আবার মাইলসে এলেন, নিশ্চয় সমঝোতা হয়েছে। আপনি কী ছাড় দিলেন, দলের অন্যরাই বা কী ছাড় দিয়েছেন?
সমঝোতা তো হয়েছেই। যে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করার দরকার ছিল, সে বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতেই আলাপ হয়েছে। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগিয়ে যাব।

গত বছর মাইলস ছাড়ার সময় ছোটদের ব্যাপারে আপনি অভিযোগ করেছিলেন…
নো নো, আমি এসব নিয়ে কোনো কথাই বলব না …

আর ওসব নয়, এবার পরবর্তী পরিকল্পনার কথা বলুন? কীভাবে এগোবেন?
আমরা কিন্তু মাসখানেক ধরে মহড়া করছি, টিভি অনুষ্ঠানের শুটিং ছিল। ভক্তরা শিগগির টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দেখতে পাবেন আমাদের। মাইলস ব্যান্ডের পুরোনো লাইন-আপের সবাই থাকবে একত্রে। নতুন গানের পরিকল্পনাও চলছে। দেখা যাক।

আপনি তো এককভাবেও গান করেন। সেটা কি আগের মতোই করবেন?
একক শিল্পী হিসেবে কোনো কাজে আমার ইচ্ছা থাকলে, সে কাজ অবশ্যই আমি করব, অতীতে যেভাবে করে এসেছি। সাম্প্রতিক সময়েও কিছু একক গান প্রকাশিত হয়েছে।

অনেকের অভিযোগ আশি ও নব্বইয়ের দশকের মতো গান এখন আর ব্যান্ডগুলোর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?
সামাজিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। হঠাৎ করে মাইলসের গান ভালো হবে না, তা হতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে মাইলসের কিছু গান যেমন ‘প্রতিচ্ছবি’ অ্যালবামের ‘প্রিয়তমা মেঘ’, ‘প্রতিচ্ছবি ডিলাক্স’ অ্যালবামের ‘অচেনা জীবন’, ‘নতুন ভোর’, ‘চাই তোমাকে’ মনোযোগ দিয়ে শুনলেই শ্রোতারা নব্বইয়ের দশকের মাইলসকে খুঁজে পাবেন। তবে এটা ঠিক যে উন্মাদনার ধরনটা বদলাচ্ছে। শুধু মাইলস না, আশি ও নব্বইয়ের দশকে অনেক ব্যান্ড দুর্দান্ত কিছু গান উপহার দিয়ে গেছে। ডিজিটাল যুগে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আমাদের কাজ সৃষ্টি করা, আমরা করে যাব। কখন কার গান কীভাবে ভালো লাগবে, সেটা সময় বলে দেবে। এখন সংগীত আকাশে-বাতাসে ঘুরছে, মানুষ অনলাইনে গান শুনছে। গান শুনতে ডেটা খরচ করছে, সংগ্রহ করছে না। মানুষের হাতে এখন সময় অনেক কম। মানুষ অর্থের পেছনে দৌড়াচ্ছে, বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। সংগ্রামের মধ্যে আসলে কতটুকু সময় তাঁরা গানের মধ্যে দিতে পারছেন? মোবাইলে গান শোনা বা ক্যাসেট প্লেয়ার কিংবা ভালো কোনো সাউন্ড সিস্টেমে শোনার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। একটা সময় গানের মধ্যে অনেক আবেগ কাজ করত। এখন আবেগ কমে গেছে। এখন চলতে ফিরতে শোনে, সাময়িক আনন্দের জন্য শোনে। একটু ভালো লাগবে, এ জন্য শোনে।

তাহলে গান কোন দিকে যাচ্ছে?
সবকিছুর পরও আমি অত্যন্ত আশাবাদী। আমি একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করে থাকি। ‘ক্রিয়েশন অ্যান্ড জয়’ নামের সেই অনুষ্ঠানটি দেখানো হয় এনটিভিতে। শুধু গায়ক-গায়িকা নয়, অনুষ্ঠানে অতিথি থাকেন সংগীতজগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষেরা। সবার সঙ্গে কথা বলে যেমন জানতে পারছি, ঠিক তেমনি নিজেও যা বুঝতে পারছি, তাতে আমি আশাবাদী। এখন খুব দ্রুতগতিতে অনেক গান তৈরি হচ্ছে, অনেক শিল্পী, সবাই ব্যস্ত। আরেকটা বিষয়, সৃজনশীল কাজে এখন সবার আগ্রহ রয়েছে। এই যে আগ্রহ এবং চেষ্টা এর মধ্য দিয়ে নতুন কিছু তো হচ্ছে। শ্রোতারা তাঁদের পছন্দমতো গানও পাচ্ছে। অনেক গান মুক্তি পাচ্ছে। ঈদ কিংবা অন্য উৎসবে অ্যানালগ যুগে যেমন উন্মাদনা দেখতাম, কিছুদিন ধরে ডিজিটাল যুগেও সেই উন্মাদনা দেখতে পাচ্ছি। অনেক প্রতিভাবান শিল্পী পাচ্ছি। অনেকের গান দর্শকেরা খুব পছন্দ করছে। এটা খুবই স্বাভাবিক।

রাজনীতিতে এলেন, গানে এর প্রভাব পড়বে?
বহু বছর ধরে সংগীতকর্মী হিসেবে অনেক কিছু পেয়েছি। মনে করি, একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি। নিজেকে নিয়ে শুধু নয়, নিজের বাইরে, সমাজ নিয়ে, দেশ নিয়ে চিন্তা করতে হয়। যে দেশে আছি, নাগরিক হিসেবে সে দেশের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে। বাংলাদেশ এমন একটা জায়গা, যেখানে আমাদের সবার জীবনে রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। এটা খুব ইউনিক একটা ব্যাপার, রাজনীতির প্রভাব সমাজের সর্বক্ষেত্রে রয়েছে। এটা বাদ দিয়ে চলা যায় না। চাকরি, রাস্তাঘাটের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ—যেদিকে তাকাই না কেন, সবকিছুর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। সুতরাং দেশের জন্য কিছু করতে চাইলে কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ করতে হবে। এর বাইরে থেকে সত্যিকার অর্থে কিছু করার সুযোগ এই দেশে কম। বেশ কয়েক বছর ধরে আমার মাথায় একটা জিনিস কাজ করেছে, কিছু করতে পারলে আমি নিজে তৃপ্ত থাকব। সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিকভাবে সমাজে যদি কোনো অবদান রাখতে পারি।

রাজনীতিক হিসেবে সমাজের জন্য কী করতে চান?
আমার হাতে যে দায়িত্ব আসবে, আমি যে সুযোগ পাব বা যে ধরনের সুযোগ নিজের জন্য সৃষ্টি করতে পারব, সেখানেই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ করব। খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কিছু করার চেষ্টা করব।

সরাসরি জানতে চাই, কোন পরিবর্তনটা প্রথম চান?
সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। আমাদের সমাজের সমস্যা তো বহুমুখী। আমরা দৈনন্দিন জীবনে বহু সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের আশপাশে অনেক কিছুর উন্নতি হয়েছে আরও অনেক কিছুর উন্নতি করার প্রয়োজন আছে। সুতরাং, সবাই মিলে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কিছু কাজ করার চেষ্টা করতে পারি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment